🔰আজ আমি আপনাদের সাথে মাকে হারানোর গল্প শেয়ার করব।অনেক কষ্ট পাই তাই এতদিন গল্পটা লিখিনি।
💞💘স্মৃতিতে মা শুধুই মা💘💘
🔰মাহে-রমজান পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস,গুনাহ মাপের মাস,ত্যাগের মাস,আত্মসংযমের মাস আমরা সবাই জানি।আল্লাহর আদেশে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে কন্ট্রোল করে চলতে হয়।সিয়াম পালনের মাধ্যমে ধনী-গরিব সবাই ক্ষুদার যন্ত্রনা উপলব্ধি করতে পারি।এক কথায় বলা যায় শিক্ষনীয় মাস হলো রমজান।
💘আমার জন্য,আমাদের পরিবারের জন্য রমাজান মাস অনেক বেশি ত্যাগের মাস।কারন এ রকমই এক রমজানের শেষ১০(নাজাতের)২৩শে রমজান আমি মাকে হারিয়েছিলাম।মাকে হঠাৎ হারিয়ে মনে হয়েছিল পৃথিবীটা হারিয়েফেলেছি।কারন আমার মা ছিল আমার পৃথিবী।আমরা ৫ভাই ২বোন।আমি সবার ছোট।আব্বা ব্যবসা করতেন।বড় ভাই বিয়ে করেছিল।বড় আপুকেও আরো অনেক আগেই বিয়ে দেয়া হয়েছিল।আর আমরা সব ভাই-বোন লেখাপড়া করতাম।আমরা ভাই-বোন বেশিতো তাই আব্বা ব্যবসা করলেও সংসারের সমস্ত খরচ মিটাতে অনেক কষ্ট হয়ে যেত।আর ছোট আপুও বিবাহযোগ্য ছিল।মা থাকাকালিন ছোট আপুর অনেক বিয়ে আসতো কিন্ত ব্যাটে-বলে না মিলাতে ঠিক হতোনা।মা অনেক টেনশন করতো বিয়ে নিয়ে।সামনে রমজান মাস তখন স্বপ্নেও ভাবিনি আপুর বিয়ের আগেই মায়ের মৃত্যু হবে।মৃত্যুর আগেরদিন ২২রমজান রাতে আমি একটি স্বপ্ন ও দেখেছিলাম।হয়তো স্বপ্নটা মায়ের মৃত্যুর ইঙ্গিত করেছিল কিন্তু বুঝতে পারিনি সেই জ্ঞানও ছিলনা।২৩রমজান সকালে মা-বাবা সবার সাথে স্বপ্ন শেয়ার করলাম কিন্তু মা কোন মন্তব্য করেনি যা অন্য সময় করতো।স্বপ্নটা দেখে আমি খুব ভয়ও পেয়েছিলাম।খুব জোরে চিৎকার ও করি।ভয়ে আমার শরীর ও কাপছিল।মা-বাবা অন্যঘর থেকে দৌড়ে এসে বলছিল কি হইছে।আমি বললাম কেমন জানি একটা স্বপ্ন দেখলাম।তারা বলল রাতে স্বপ্ন বলতে নেই সকালে বলিস।সকাল হতেই রান্না ঘরে চলে আসি আমারই কৌতুহলে এসে দেখি মা,বড় আপু আছে।আপু বলল স্বপ্ন কি দেখছস।আমি বলছি আমি দেখলাম আমাদের ঘরের চালের টুয়ার উপর একাধিক হুজুরের মত বসা এবং ভয়ে আমার শরীর কাপছিল।বলার পর আপু বলল যা দেখছস ভালই দেখছস।কিন্তু মা কিছুই বলেনি নিরব ছিল।কিন্তু কেমন জানি চিন্তিত ছিল।রোজার মধ্যে রান্না করা হয় দুপুরের পর।মা রান্নার আইটেম রেডি করে আনুমানিক ১২টার দিকে গোসল করতে গেল।গোসল করে নামাজ পরে রান্না বসাবে।কিন্তু গোসল খানায় ভিজা অবস্থায়ই আমার বড় আপুকে ডাকতে থাকে। আপু যাওয়ার পর বলে আমাকে ঘরে নিয়ে যা আমার মাথাটা কেমন লাগছে।ঘরে এনে মাকে বিছানায় শুয়ানো হল।আর আমাকে বলল বড় ভাইয়াকে বলতাম গাড়ি নিয়ে আসতে মাকে দ্রুত হাসপাতাল নিতে হবে।আমি এক দৌড়ে বড় ভাইয়াকে বলে আসলাম।এসে দেখি আপুরা,ছোট ভাইয়া কান্না করছে।মায়ের নিশ্বাস নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।মা নেই।মুহুর্তে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এল।তখন ঘড়ির কাটায় ১টা বাজে।হাউ-মাউ অনেক কেঁদেছিলাম সব ভাই-বোন এক পর্যায়ে চোখের পানিও শুখিয়ে যায়। আমার মা রোজা অবস্থায় চিরবিদায় নিয়েছিলেন।সবাই বলতো সৌভাগ্যের মৃত্যু।কিন্তু আমার জন্য,আমার পরিবারের জন্য অনেক বেশি দুঃখের ছিল।কাজেই রমজান মাস আমার জন্য অনেক বেশি বেদনার।তাই রমজান মাস আমাকে অনেক বেশি টাচ করে।সেহরির সময়ে দেখতাম সবার রুমের দরজায় মা নক করত।খেতে আয়,খেতে আয় পরিবারের সবাইকে না খাইয়ে মা খেতে বসতোনা।আব্বাকে আগে কোনদিন কাদঁতে দেখিনি মা মারা যাবার পর নিরবে বহুবার কাদঁতে দেখেছি।আমাদের বাড়িতে রেগুলাের যেসব ফকির আসতো তারাও শুনে কাদতো আর আফসোস করতো।আমার বড় চাঁচি,ছোট চাঁচি সবাই এখনও আছে।অথচ আমার মা হঠাৎ চলেগিয়েছিলেন না ফেরার দেশে।যা প্রথম প্রথম ২/৩বছর মেনে নিতে পারিনি।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেনেতো নিতেই হবে। আমার যখন মা-বাবা ছিল।তখন ভাবতাম যাদের মা-বাবা নেই তারা কিভাবে থাকে।কারন মা-বাবা থাকবেনা এটা ভাবলেই আমার কাছে জগৎটা অনেক অন্ধকার লাগতো। নিয়তির পরিহাসে আমি যখন মাকে হারালাম,এক পর্যায়ে বাবা হারালাম তখন বুঝতে পেরেছি যাদের নেই তারা কিভাবে থাকে।বুঝতে পারছি মা-বাবার মত দামি সম্পদ পৃথিবীতে আর নেই।মা-বাবা তোমরা ভাল থাক।হে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের উঁচু মর্যাদা দান করুন।
💝শৈশবেও মায়ের স্মৃতি খুব মনে পড়ে।জ্বর আসলে মা আব্বাকে বাধ্য করতো ঔষধ এনে দিতে।ছোট সময় ভাবতাম আমি যখন কামাই-রোজকার করব।আমার ইনকামের প্রথম টাকা দিয়ে মাকে শাড়ি কিনে দিব।কিন্তু আমার এ ইচ্ছেটা আল্লাহ পুরন হতে দিলনা।হুজুররা বলেন আল্লাহ যা করেন ভালর জন্যই করেন।সত্যি একেমন ভাল আল্লাহ ই জানেন।আল্লাহ মাফ করে দিন।আমার ২বোনের মধ্যে আমার বড় আপা আদর্শবান এবং অনেক বেশি দায়িত্বশীল একজন নারী। আমার মা থাকতেও আমি একটু বড় আপুর ভক্ত ছিলাম।তার আদরও স্নেহে মায়ের অভাবটা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে।আমার বড় বোনের অনেক অবদান জানিনা শোধ করতে পারব কিনা।তবে আমি ইনকাম করে বড় বোনের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি।তাতে নিজেকে সফল মনে হয়েছে কিছু সময়ের জন্য হলেও।কারো ইচ্ছে পুরন করা অনেক আনন্দের।
আমাদের শ্রদ্ধেয় মেন্টর ইকবাল স্যার একটা সেশনে মা-বাবাকে কতটা ভালবাসব,কিভাবে ভালবাসব সে সমন্ধে অনেক সুন্দর পরামর্শ এবং শিক্ষা দিয়েছেন।কিন্তু সারের এ সেশনটা পড়লেই আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসত।কারন আমারতো মা-বাবা নেই।ঐ সেশনে স্যার বলেছিলেন মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে যে মা আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি কাকে জড়িয়ে ধরে বলব।সেশনটা পড়ে নিরবে কাদঁতাম।আর ভাবতাম আমি এতিম। মনকে শান্তনাদিতাম এতিমদের এতো ভালবাসা পেতে নেই।কিন্তু মনটা অনেক হাহাকার করত।কারন আমি ওতো ভালবাসার পাগল।
তবে আমার সবচেয়ে আনন্দের এবং গর্বের বিষয় জীবিতকালে আমার মাও আমার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল আমার বাবাও আমার প্রতি অনেক সন্তুষ্ট ছিল।আর তাদের দোয়া আছে বলেই প্রায়ই অনেক বিপদ থেকে বেঁচে যাই, আল্লাহ ভাল রেখেছেন।বাড়িতে থাকলে প্রতি জুম্মা পড়েই কবর জিয়ারতে গাবতলি আসি এবং দোয়া করি হে আল্লাহ মা-বাবাকে ভাল রাখুন।
✅ আমি বলব যাদের মা-বাবা আছে।মা-বাবাকে সম্মান করুন,ভালবাসুন,সেবা করে দেখুন দুনিয়াতে অনেক ভাল থাকবেন এবং জান্নাত আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
🔎🔎মায়ের মৃত্যু পরবর্তী আরো গল্প আছে অন্যদিন লিখব।
আমি ক্ষুদ্র মানুষ লেখার ভুলগুলো ক্ষমা করে দিবেন।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৩৩
Date:- ১৭/০৫/২০২১
👉শুভেচ্ছান্তে-
💐সাজ্জাদ হোসেন ভুইয়া
💐৭ম ব্যাচ
💐রেজিঃ৬৬৪৯
💐ব্লাডগ্রুপঃAB+
💐নরসিংদী সদর
✅ফাউন্ডারঃমাহজুবা কনস্ট্রাকশন
👁️🗨️মেইলঃ sajjad.21m@gmail.com
ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥
আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।